বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণ জানালো বিবিসি

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:৫৪, শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪, ২৪ ফাল্গুন ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

  • ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে
  • গত দশ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ দ্বিগুন বেড়েছে
  • বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণ জ্বালানি সংকট
  • বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমানো এখন সরকারেরও মাথাব্যথার কারণ

বাংলাদেশে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভর্তুকি সমন্বেয়ের লক্ষ্যে ও জনস্বার্থে নতুন এই বর্ধিত মূল্য ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধিকে ভালো চোখে দেখছে না সরকার বিরোধীরা।

সম্প্রতি এই বিতর্কের মাঝে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি। বিবিসি বলছে, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। গত দশ বছরে উৎপাদন খরচ দ্বিগুনেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

কারণ হিসেবে বিবিসি বলছে উৎপাদনের জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন তার বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচও ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। প্রায় এক যুগ আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে গড়ে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হতো ৫.৪৭ টাকা। প্রায় ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.০৪ টাকা। এর সঙ্গে সরবরাহ ব্যয় যুক্ত হলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হয় প্রতি ইউনিটে ১১.৩৮ টাকা।

এক দশক আগের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রির কারণে ইউনিট প্রতি গড়ে ভর্তুকি প্রয়োজন ছিল ০.৯৪ টাকা। গত অর্থবছরে এই ভর্তুকীর প্রয়োজন দাঁড়িয়েছে ইউনিট প্রতি ৫.৪৪ টাকা।

একক ক্রেতা হিসেবে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা পিডিবি দেশের সব বিদ্যুৎ ক্রয় করে এবং বিতরণ সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ও গড় বিক্রয়মূল্যের মধ্যে যে পার্থক্য তাতে বিপুল অঙ্কের টাকা ঘাটতি থেকে যায়। এই ঘাটতি পূরণে সরকার থেকে ভর্তুকি নেয়ার প্রয়োজন হয়।

বর্তমানে এই ঘাটতির পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যেটি সরকারের তহবিল থেকে ভর্তুকি দেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে এবং ভর্তুকি দিয়ে সরকার এই ঘাটতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে।

তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্থাটির ঘাটতি হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি বাবদ পেয়েছে ২৯ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। তাই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ধাপে ধাপে আরো বাড়িয়ে উৎপাদন মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।  

বিবিসির চোখে বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণ:

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার কারণ জ্বালানি সংকট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক জ্বালানির ব্যবহারে আমদানি এখন অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ১০ বছর আগে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ছিল ৯০ শতাংশের মতো সেটি এখন ৫০ শতাংশেরও কম।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ১০ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে যাওয়া এবং প্রাথমিক জ্বালানির আমদানি বৃদ্ধি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেবল জ্বালানির ব্যায় হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে আমদানিকৃত ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য খরচই হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া আমদানি করা কয়লা, ভারতের আদানি কোম্পানির বিদ্যুৎ মিলিয়ে কয়লার জন্য জ্বালানি খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।  

তবে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমাতে সিস্টেম লস কমিয়ে ৭-৮ শতাংশে কমিয়ে এনেছে সরকার, আগে যা ছিল ৩০-৪০ শতাংশ। জ্বালানি বহুমুখীকরণ, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো,  সবচেয়ে বড় খরচ ফার্নেস অয়েল থেকে বেরিয়ে আসাসহ নানান পরিকল্পনা নিচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।

দিনবদলবিডি/Rabiul

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়