ভাগে কোরবানির ধর্মীয় ব্যাখ্যা

নিউজ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৫৪, বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩, ১৪ আষাঢ় ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ইসলাম ধর্মের ইতিহাস যতটা প্রাচীন—কোরবানির ইতিহাস ততটা প্রাচীন। দুনিয়ার আদিকাল থেকেই কোরবানির প্রচলন রয়েছে। এখনো সৃষ্টি জগতের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যে, প্রতিটি জীবই অন্যের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। কোরবানি তারই একটি জ্বলন্ত নিদর্শন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপকরণও বটে। সুতরাং কোরবানির তথ্য খুবই সূক্ষ্ম। মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন—আর আমি নির্ধারণ করেছি প্রত্যেক জাতির জন্য কোরবানি যেন তারা তাদের প্রদত্ত চতুষ্পদ জন্তু দ্বারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে (সুরা হজ, আয়াত ৩৪)।

ইসলামী শরিয়তে, একাকী এবং ভাগে কোরবানি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অংশীদারত্বের ভিত্তিতে যে কোরবানি করা হয় তাকে ভাগে কোরবানি বলে। কোরবানির প্রাণী সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ যেমন ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কোরবানি দিতে পারবে। এগুলো দ্বারা একাধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি করা সহিহ হবে না। দ্বিতীয় ভাগ উট, গরু ও মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে। সাতের অধিক শরিক হলে কারও কোরবানি সহিহ হবে না। এ সম্পর্কে সহিহ মুসলিম শরিফে হজরত জাবের (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে হজ করেছিলাম, তখন আমরা সাতজন একটি উট এবং একটি গরুতে শরিক হয়ে কোরবানি করেছি। উট, গরু ও মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যে কোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। তবে শরিকে কোরবানি করলে কারও অংশ এক-সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না, এমন হলে কোনো শরিকেরই কোরবানি সহিহ হবে না।

অংশীদারদের কেউ যদি আল্লাহর হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে, শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে; তাহলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। এমনকি তাকে কেউ অংশীজন বানালে, তাদের (অংশীজনদের) কোরবানিও শুদ্ধ হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অংশীজন নির্বাচন করা জরুরি। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে।

কোরবানি করতে হবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে। হারাম টাকায় কোরবানি করা শুদ্ধ নয় এবং এক্ষেত্রে অন্য অংশীজনদের কোরবানিও শুদ্ধ হবে না। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন—‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি হালাল ও পবিত্র ব্যতীত কোনোকিছু গ্রহণ করেন না।’

পরিশেষে, কেউ কেউ মনে করেন, যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তারা কোরবানি করতে পারবে না। এ ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। বরং তারা কোরবানি করলে অধিক সওয়াব পাবেন। নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি করা ওয়াজিব। সন্তানের পক্ষ থেকে পিতার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। তবে পিতা যদি নিজের মাল থেকে নাবালিগ ছেলের পক্ষ হয়ে কোরবানি করেন, তাহলে নফল হিসেবে গণ্য হবে। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা যায়। আর এতে তিনি অধিক সওয়াবের অধিকারী হবেন। যদি কোনো ব্যক্তির ১০ জন ছেলে থাকে আর সবাই একান্নভুক্ত হয়, তাহলে শুধু পিতার ওপর একটি কোরবানি ওয়াজিব হবে। তবে ছেলেরা যদি ব্যক্তিগতভাবে নিসাবের মালিক হয়, তাহলে পিতার কোরবানি তাদের জন্য যথেষ্ট নয়, পৃথকভাবে তাদেরও কোরবানি করতে হবে। অনুরূপভাবে স্ত্রী নিজে ‘মালেকে নেসাব’ হলে তাকেও আলাদাভাবে কোরবানি করতে হবে।

কোনো কোনো স্থানে প্রচলন রয়েছে, এক বছর নিজের নামে, এক বছর ছেলের নামে এবং এক বছর নিজ স্ত্রীর নামে কোরবানি করে, অর্থাৎ প্রতিবছর নাম পরিবর্তন করতে থাকে। এটা ঠিক নয়। বরং যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব, কেবল তার নামেই কোরবানি করতে হবে। কোরবানির পশুতে কাউকে শরিক করার ইচ্ছে থাকলে খরিদ করার আগেই ঠিক করে নেবে। কারণ একা কোরবানির নিয়তে পশু খরিদ করার পর অন্য কাউকে শরিক করা মাকরুহ। তবে এমন ব্যক্তি যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, সে একার নিয়তে খরিদ করার পর অন্যকে শরিক নিতে পারবে না।

কোরবানির গোশত নিজে খাবে, বন্ধুবান্ধব এবং ধনী আত্মীয়স্বজনকেও দেবে। এমনকি অমুসলিম প্রতিবেশীকেও দিতে পারবে। তবে মৃতের অসিয়তকৃত কোরবানি হলে সে গোশত কেবল গরিবদের মধ্যে সদকা করতে হবে। কোরবানির গোশত, চামড়া ও তার মূল্য দ্বারা কসাই এবং জবেহকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া বৈধ নয়। পৃথকভাবে তাদের মজুরি দিতে হবে। চামড়ার বিক্রয়লব্ধ সমুদয় অর্থ গরিবকে সদকা করা ওয়াজিব।

হালাল প্রাণীর আটটি অংশ ছাড়া অন্য সবকিছু খাওয়া বৈধ। নিষিদ্ধ আটটি অংশ হলো—উভয় লিঙ্গ, মূত্রথলি, পিঠের হাড়ের মধ্যকার সাদা রগ, চামড়ার নিচের টিউমারের মতো উঁচু গোশত, অণ্ডকোষ, পিত্ত ও প্রবাহিত রক্ত।

দিনবদলবিডি/Rabiul

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়