বাংলাদেশে 'ভারত বিরোধিতা': এগিয়ে আসতে হবে ভারতকেই!

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:৫৯, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১৯ মাঘ ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

সীমান্তে হত্যাকাণ্ড আর মুসলিম বিদ্বেষ নিয়ে ভারতের প্রতি বাংলাদেশিদের ঘৃণা বহু বছরের। যদিও এই অশ্রদ্ধা একান্তই গোপনে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশটির ছায়া পড়তেই দৃশ্যমান হয় প্রকাশ্য শত্রুতা। তাই সবার আগে দুই দেশের জনগণের মাঝে গড়ে ওঠা ধারণাকে অসত্য প্রমাণ করতে হলে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বেশ পুরোনো। মেলবন্ধন রয়েছে বাঙালিয়ানার সঙ্গেও। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দেশ দুটির সম্পর্ক ভালো হলেও ভুল বোঝাবুঝির কমতি নেই। দুই দেশের মানুষের মাঝে রয়েছে অবিশ্বাস আর সন্দেহ; যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় পূর্ণাঙ্গ বিরোধিতায়। ছড়িয়ে পড়ে বিবাদ-বিদ্বেষও। বর্তমানে নানান অভিযোগ ও ইস্যুতে বাংলাদেশে ‘ভারত বিরোধিতা’ কেবলই বাড়ছে। এই অন্তর্দ্বন্দ্ব বা প্রতিকূলতা কমাতে কোনো উদ্যোগ কী নেবে আঞ্চলিক পরাশক্তি দেশটি; এমন প্রশ্ন সচেতন মহলে উঠে আসছে বারবার।

সীমান্তে হত্যাকাণ্ড আর মুসলিম বিদ্বেষ নিয়ে ভারতের প্রতি বাংলাদেশিদের ঘৃণা বহু বছরের। যদিও এই অশ্রদ্ধা একান্তই গোপনে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশটির ছায়া পড়তেই দৃশ্যমান হয় প্রকাশ্য শত্রুতা। ‘২০১৪ ও ২০১৮ সাল তথা দশম-একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভারতের কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপিসহ সমমনা সবকটি রাজনৈতিক দল, যদিও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এই অভিযোগ ছিলো না।

নির্বাচন নিয়ে শুরুতে নীরব ছিল ভারত। অনেকটা নিরপেক্ষ সুরেই কথা বলেছিল দিল্লির সরকার। দেশটির স্বতন্ত্র ভূমিকায় সাহস যুগিয়েছিল এপারের বিরোধী শিবিরে। যদিও নির্বাচন ঘনিয়ে এলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে দিল্লির অসন্তুষ্টিকে ভালো চোখে দেখেনি তারা। তবে ভোটের পর পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। সরকারবিরোধীরা অভিযোগ তোলে যে, ভারতের হস্তক্ষেপের কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।

এরপরই নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকারবিরোধী সাধারণ মানুষের মনোভাব পাল্টাতে থাকে। আলোচনায় আসে ভারতীয় পণ্যের ডাক। অনলাইন অ্যাক্টভিস্টদের প্রচারণায় বাংলাদেশের অনেকেই ভারতের জিনিসপত্র বর্জন শুরু করেন। এর মধ্যেই সীমান্তে ঘটে বিজিবি হত্যার ঘটনা; যা ‘বিচ্ছিন্ন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন একজন মন্ত্রী। এছাড়া বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ককে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করতে যেয়ে মন্ত্রীবর্গের অতিকথনও বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে যখন সীমান্তে হত্যাকাণ্ড  ঘটতে থাকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণকে বিবেচনায় না রাখার কারণেই প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে গড়ে ওঠা ভারত বিরোধিতা দেশটির জনগণের বিরুদ্ধে নয়। মূলত এই মনোভাবকে প্রবল মাত্রায় ইন্ধন দিয়েছে ভারত সরকারের কিছু কিছু নীতি। বিশেষভাবে সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন ৫৪ নদীর হিস্যা নিয়ে একপেশে মনোভাব, ভারতীয় কিছু নেতার বাংলাদেশ ও মুসলিম বিরোধী বক্তব্য এবং বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্য মন্তব্য বা ভূমিকা রাখার চেষ্টা।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা কিছু ধারণাও মানুষের মাঝে পারষ্পরিক অশ্রদ্ধার জন্ম দিয়েছে। সাধারণত ভারতীয়রা মনে করেন ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা অনেক নির্যাতিত, আবার বাংলাদেশিরা ভাবেন সেখানে মুসলিমরা ভালো নেই। ভারত সরকারের হাতে ইসলাম নিরাপদ নয়’। তাই সবার আগে দুই দেশের জনগণের মাঝে গড়ে ওঠা ধারণাকে অসত্য প্রমাণ করতে হলে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। জনগণের মনোভাবকে গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে কিছু বিষয়ে ভারতের একপেশে মনোভাব ত্যাগ ও অমীমাংসিত ইস্যুকে ঝুলিয়ে না রেখে দ্রুত সমাধানের পথে এগিয়ে আসতে হবে ভারতকেই।

দিনবদলবিডি/Mamun

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়