ডেঙ্গু: সেকেলে ধারণায় সর্বনাশ!

দিন বদল বাংলাদেশ ডেস্ক || দিন বদল বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:৩৪, বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩, ২ ভাদ্র ১৪৩০
ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

 এবারে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হার ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সর্বমহলে। প্রতিদিন গড়ে ৮/১০ জন রোগী মারা যাচ্ছেন। আক্রান্তের হারও কম নয়। গত ১৩ আগস্ট দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪১৬ জন, বর্তমানে প্রায় ৫০০। আর আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় লক্ষের কাছাকাছি। কিন্তু হঠাৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কি?

 

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশ কিছু রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরোনো বা সেকেলে ধ্যান ধারণায় আসক্ত তারা। নতুন কোনো তথ্য জানা নেই তাদের! আসুন জেনে নেই সেকেলে বা নতুন ধ্যান-ধারণা কি?

বছর দু'তিনেক আগেও মনে করা হতো ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা দিনে কামড়ায়, রাতে নয়। এ মশা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়, ময়লায় নয় অথবা ডেঙ্গু হলে গায়ে লাল র‌্যাশ  ওঠে, প্রচন্ড জ্বর হয়, জ্বর নামতে চায়না। এসব ধারণার কোনটিই এখন আর সত্যি নয়। কেননা বদলেছে এডিস মশার চরিত্র। ডেঙ্গুর জীবাণুর ভেরিয়েন্ট প্রায় প্রতিবছরই পরিবর্তীত হয়েছে বিধায় পূর্বের এসব তথ্য আর মেলেনা। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে প্ৰকৃত তথ্য নেই। ফলে সেকেলে ধারণায় আস্থা রেখে মানুষ দিনে সতর্ক থাকলেও রাতে অনেকেই মশারী না টাঙিয়ে ঘুমান। অথচ এডিস মশা এখন দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই কামড়ায়। পরিষ্কার বা ময়লা সকল পানি বা নর্দমাতেই প্রজনন ঘটছে এ মশার।

এছাড়া প্রচন্ড জ্বর না আসায় বা অল্প জ্বরের কারণে বা গায়ে র‌্যাশ না ওঠার কারণে এটিকে সিজনাল জ্বর ভেবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে অপেক্ষা করেন, কিন্তু যখন অবস্থা খারাপ হতে থাকে তখন হসপিটালে গেলেও ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে যায় চিকিৎসা শুরুর জন্য। ফলে মৃত্যু অবধারিত হয়ে পড়ে।

এবারে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণে অনেকেরই তীব্র জ্বর বা গায়ে র‌্যাশ ওঠা অথবা প্রচলিত কোনো লক্ষণই প্ৰকাশ পায়না। বমিও হয়তো থাকেনা। সিজনাল জ্বরের মতোই মনে হয়। তবে কারো কারো পাতলা পায়খানা শুরু হতে পারে অল্প জ্বরের মাঝেই বা জ্বর নেমে যাবার মুহূর্তে। তবে ডেঙ্গু ধরা পড়ার পরে রোগীর ভয় বা পেনিকড হয়ে যাওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই বিপদের কারণ হয়ে যাচ্ছে।

উপরোক্ত তথ্যগুলো এবারের ডেঙ্গু আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই জানতেননা। কিন্তু কেন তারা জানেননা? কেন অতীতের বা সেকেলে ধারণাতেই ছিলেন? এ দায় কি শুধু তাদের?

ডেঙ্গু জ্বর বা এডিস মশা সম্পর্কিত যে সেকেলে ধারণা সেটি তারা সেকেলে সময়ে কিভাবে পেয়েছিলেন? নিশ্চয়ই ডাক্তারদের মাধ্যমে এবং মিডিয়ার কল্যাণে। ডাক্তাররা এবার বা এর আগেও সর্বশেষ তথ্যই বলেন বা জানান। কিন্তু মিডিয়া সেই তথ্য গুরুত্বের সাথে প্রচার করেছে কি? অথবা মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচারণার দায়িত্ব যার বা যাদের ওপর ছিলো তারা কি সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছেন?

এবার আসি প্রতিরোধের উপায় নিয়ে প্রচলিত ব্যবস্থায়। সাধারণভাবে রাতে মশারী টাঙানো ছাড়া আমরা আর কি করি? দিনে সাধারণত এরসোল বা কয়েল ব্যবহার করি। অনেকে ওডোমাস জাতীয় ক্রিমও ব্যবহার করি। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রিপিলেন্টও ব্যবহার করেন অনেকে। তবু মশার কামড় থেকে বাঁচতে পারছেন না। তাহলে উপায়?

মূলত এর সঠিক কোনো উপায় নেই। প্রত্যেককেই সামর্থ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে আবশ্যিক হিসেবে নিজের বাসস্থান ও চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা, রাতে মশারী টাঙানো, সম্ভব হলে দিনেও (যারা ঘুমান) মশারী টাঙাতে হবে। কয়েলের বদলে মশা তাড়াতে ধুপ অধিক কার্যকর। গায়ে মাখার ক্রিম বা রিপিলেন্ট প্রতি বছর(ব্র্যান্ড) পরিবর্তন করা উচিত, কেননা মশার দ্রুত সয়ে নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সর্বোপরি সম্মিলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সামাজিকভাবে। কেননা মশার হাত থেকে রক্ষার মূল কথাই পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও সচেতনতা, যা এককভাবে সম্ভব নয়। এর জন্য সরকারের সাথে জন প্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের যেমন দায় আছে তেমনই দায় আপনার ও আমার, ব্যক্তিগতভাবেও সকলের।

সবশেষে বলা প্রয়োজন, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে জানার জন্য ডাক্তার বা শিক্ষকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কোনো বিষয়ে আপডেট জানার জন্য গুগলই যথেষ্ট। কাজেই "বাঁচতে হলে জানতে হবে"। জানার কোনো বিকল্প নেই।

দিনবদলবিডি/Rakib

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়